একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। লাল ক্রস দেয়া হয়েছে কাটার জন্য নির্ধারিত অনেক গাছে।
ক্রস দেয়া সে গাছগুলো বাঁচাতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রিন সেভার বাংলাদেশ’। তারা প্রতিটি গাছকে একেকজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করেছে।
এ নিয়ে গ্রিন সেভার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনির সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
তিনি বলেন, ‘শুধু পরিবেশই নয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। কয়েক দশকের পুরোনো এই গাছগুলো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতির সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
‘টানা কয়েক দিন ধরে আমরা গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। বাকি গাছগুলো যাতে না কাটা হয় সেই প্রতিবাদও জারি রেখেছি। গতকাল আমরা বীরশ্রেষ্ঠ ও বীর উত্তমদের নামে গাছের নামকরণ শেষ করেছি। আজকে আমরা বীরপ্রতীকের নামে করব। এইভাবে পালাক্রমে আমরা সবগুলো গাছের নামকরণ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করব।’
গ্রিন সেভার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, ‘গাছগুলো বাঁচাতে আমরা আজ থেকে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের পাশে পাহারায় থাকব।’
যে কারণে কাটা হচ্ছে গাছ
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেশ কিছু শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলেছে। গাছগুলো ছিল বিলুপ্তপ্রায় পাখির আবাসস্থল।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অর্ধশতাধিক পুরোনো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা পড়েছে উদ্যানের পুরনো গগণ শিরিষ, সেগুনের মতো গাছও। এ ছাড়া কেটে ফেলার জন্য চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে আরও শতাধিক গাছ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা থেকে রক্ষা করতে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করা হয়। ছবি: সাইফুল ইসলামউদ্যানের বিভিন্ন জায়গায় কেটে ফেলা গাছের গুঁড়ি দেখা গেছে। টিএসসি প্রান্তের গেট দিয়ে উদ্যানে ঢুকতেই চোখে পড়ে বেশ কিছু গাছের গায়ে লাল রং দিয়ে ক্রস চিহ্ন। এগুলোও কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, উদ্যানের সবগুলো প্রবেশপথসহ বিভিন্ন জায়গায় রেস্তোরাঁ নির্মাণের জন্য গাছগুলো কাটা হচ্ছে।
উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, তিনটি অংশে মাটি কেটে গোল বৃত্তাকার নকশা করা হয়েছে। সেসব নকশার মাঝে যে গাছগুলো পড়েছে সেগুলো এরই মধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। আর আশপাশে আরও গাছের গায়ে ক্রস চিহ্ন রয়েছে।
প্রতিবাদের ঝড়
গাছ কাটার ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরিবেশবাদী কয়েকটি সংগঠন গত বুধবার দুপুরে উদ্যানে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানবন্ধন করে।
একেকটা গাছের নাম দেয়া হয় একেকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে। ছবি: সাইফুল ইসলামপরিবেশবাদী সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও সরব হয়েছেন। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. জাকিরকে দেখা যায় গাছের ডাল-পালা কুড়িয়ে পাখির বাসার মতো শিল্পকর্ম বানাতে।
শুক্রবার রাতে গাছ কাটার প্রতিবাদ জানায় ‘পরিবেশ বীক্ষণ’ নামের একটি সংগঠন। গাছে পোস্টার সাঁটিয়ে, গান গেয়ে প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটির সদস্যরা।
আইনি নোটিশ
গাছ কাটার বন্ধের দাবিতে ছয়টি সংগঠন ও এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে কাটা বন্ধের পাশাপাশি যত গাছ কাটা হয়েছে তার তিন গুণ রোপণের দাবিও জানানো হয়।
গাছের নাম দেয়া হয় বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম ও বীর প্রতীকদের নামে। ছবি: সাইফুল ইসলামগত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফরমস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।
এর আগে সেদিন দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ তিনজনকে আইনি নোটিশ দেন।